6.1 C
London
Monday, December 29, 2025
Homeএইচ এস সিএইচ এস সি তে যেভাবে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব

এইচ এস সি তে যেভাবে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব

এইচএসসি বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা তোমার জীবনের সেই সংবেদনশীল মুহূর্ত, যা তোমার আগামী কয়েক দশকের ক্যারিয়ারের গতিপথ নির্ধারণ করে দেবে। এটি কেবল একটি সার্টিফিকেট পাওয়ার লড়াই নয়; এটি তোমার দীর্ঘ পরিশ্রম, ধৈর্য এবং সুশৃঙ্খল রুটিন মেনে চলার এক কঠিন পরীক্ষা। এসএসসিতে তোমার রেজাল্ট যাই হোক না কেন, এইচএসসিতে নতুন করে শুরু করার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে বাস্তবতা হলো, এইচএসসির সিলেবাস এসএসসির তুলনায় প্রায় ৩ থেকে ৪ গুণ বড়। তাই এখানে প্রস্তুতির গভীরতা এবং ধারাবাহিকতা—উভয়ই সমানভাবে জরুরি।

এই মাস্টার গাইড বা ব্লুপ্রিন্টটি কোনো সাধারণ গাইডলাইন নয়। এটি তোমার আগামী ১৮ থেকে ২২ মাসের এক নিপুণ যুদ্ধের নকশা। আমি তোমাকে হাতে-কলমে শিখিয়ে দেব কীভাবে তুমি এই বিশাল সিলেবাসকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করবে, কীভাবে প্রতিটি বিষয়ের বেসিক কনসেপ্ট ক্লিয়ার করবে এবং কীভাবে পরীক্ষার হলে ৩ ঘণ্টার চূড়ান্ত প্রেশার সামাল দিয়ে কাঙ্ক্ষিত জিপিএ-৫ ছিনিয়ে আনবে। তুমি যদি এই দীর্ঘ এবং বিস্তারিত গাইডটি মনোযোগ দিয়ে পড়ো এবং আজ থেকেই এর প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করো, তবে তোমার জন্য সাফল্য স্রেফ একটি গাণিতিক পরিণাম হয়ে দাঁড়াবে।

১. এইচএসসি জয়ের সাইকোলজি: বিজয় শুরু হয় মগজে

অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার যুদ্ধে হেরে যায় টেবিলের সামনে বসার আগেই। তাদের অবচেতন মন সবসময় বলে যে সিলেবাস অনেক বড়, পড়া মনে থাকবে না, বা অন্য বন্ধুরা তাদের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী। কিন্তু সত্য হলো, সাফল্য মেধার চেয়ে বেশি পরিশ্রম এবং বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলের ওপর নির্ভর করে। যারা বোর্ড পরীক্ষায় টপ করে, তারা অন্য গ্রহের কেউ নয়; তারা কেবল একটি নির্দিষ্ট এবং কার্যকরী সিস্টেম অনুসরণ করে।

স্বপ্ন বনাম অ্যাকশনেবল লক্ষ্য

স্বপ্ন সবাই দেখে। সবাই চায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বড় কোনো কর্পোরেট লিডার হতে। কিন্তু স্বপ্ন কেবল অবাস্তব কল্পনা হয়ে থেকে যায় যদি না সেটির সাথে একটি কঠোর ‘ডেডলাইন’ এবং মাইক্রো-কর্মপরিকল্পনা যুক্ত থাকে। তোমার দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্ন হতে পারে বুয়েটে পড়া, কিন্তু তোমার আজকের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হতে হবে উচ্চতর গণিতের অন্তত ৫টি সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধান করা। যখন তুমি ছোট ছোট লক্ষ্যগুলো প্রতিদিন পূরণ করবে, তখন তোমার আত্মবিশ্বাস কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

কম্পাউন্ডিং ইফেক্ট: ১% রুল কীভাবে কাজ করে

তুমি যদি প্রতিদিন নিজেকে কেবল ১% উন্নত করতে পারো—অর্থাৎ গতকালের চেয়ে আজ ৫ মিনিট বেশি পড়া বা ১টি অংক বেশি সমাধান করা—তবে এক বছর শেষে তুমি বর্তমানের চেয়ে প্রায় ৩৭ গুণ বেশি দক্ষ হয়ে উঠবে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে এই কম্পাউন্ডিং ইফেক্ট জাদুর মতো কাজ করে। শুরুতে পরিবর্তনটা ছোট মনে হলেও পরীক্ষার মাস তিনেক আগে দেখবে তুমি তোমার সহপাঠীদের চেয়ে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে আছো।

ভিত্তি শক্ত করার এখনই সময়

কলেজ জীবনের প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি কনসেপ্ট পানির মতো পরিষ্কার করতে এবং বোর্ড পরীক্ষায় ১০০-তে ১০০ টার্গেট করতে জয়েন করো ১০ মিনিট স্কুল-এর ‘HSC অনলাইন ব্যাচ’-এ। আমাদের সেরা শিক্ষকদের সাহায্যে তোমার প্রস্তুতি হবে গোছানো এবং ডিস্ট্রাকশন-মুক্ত।

অনলাইন ব্যাচে এনরোল করো

২. ১৮ মাসের প্রিসিশন রোডম্যাপ: প্রতিটি দিনের সদ্ব্যবহার

এইচএসসি সিলেবাস শেষ করার জন্য তোমার হাতে গড়ে ৫৪০ দিন সময় থাকে। আপাতদৃষ্টিতে এটি অনেক মনে হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তাই এই ১৮ মাসকে আমরা ৪টি স্ট্র্যাটেজিক ফেইজে ভাগ করে আলোচনা করব যাতে তোমার কোনো পড়া জমে না থাকে।

ফেইজ ০১: ফাউন্ডেশন এবং বেসিক বিল্ডিং (মাস ০১ – ০৪)

এই প্রথম ৪ মাস অধিকাংশ শিক্ষার্থী হুজুগে নষ্ট করে। কিন্তু যারা শেষ পর্যন্ত মেডিকেলে বা পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পায়, তারা এই সময়েই তাদের আসল ভিত্তি গড়ে তোলে। বিজ্ঞান বিভাগের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের ভেক্টর ও গতিবিদ্যা, রসায়নের গুণগত রসায়ন এবং উচ্চতর গণিতের ত্রিকোণমিতি এই ৪ মাসেই শেষ করে ফেলা আবশ্যক। এই বিষয়গুলো ভালো বুঝলে পরবর্তী প্রায় সব অধ্যায় তোমার জন্য অনেক বেশি সহজসাধ্য হবে।

ফেইজ ০২: দ্য ইনটেনসিভ বিল্ডআপ (মাস ০৫ – ১০)

এই সময়ে তোমার কলেজের ক্লাস ও পরীক্ষার গতি বহুগুণ বেড়ে যাবে। তোমাকে প্রথম পত্রের প্রায় ৮০-৯০% এবং দ্বিতীয় পত্রের অন্তত ২০% সিলেবাস এই ১০ মাসের মধ্যেই শেষ করে ফেলতে হবে। মনে রাখবে, সিলেবাস শেষ করা মানে কেবল একবার রিডিং পড়া নয়, বরং অন্তত একবার রিভিশন দিয়ে ফেলা। সপ্তাহে একটি দিন বরাদ্দ রাখো কেবল রিভিশনের জন্য।

ফেইজ ০৩: কনসোলিডেশন ও টেস্ট পেপার মাস্টারক্লাস (মাস ১১ – ১৫)

টেস্ট পরীক্ষার আগে অন্তত ২ বার পুরো সিলেবাস শেষ হতে হবে। এই ফেইজে তোমার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হবে ‘টেস্ট পেপার’। অন্তত বিগত ৫ বছরের সব বোর্ড প্রশ্ন এবং দেশের সেরা ২০টি কলেজের প্রশ্ন সমাধান করা তোমার জন্য বাধ্যতামূলক। প্রতিটি অধ্যায় শেষ করে ওই অধ্যায়ের টেস্ট পেপার প্রশ্ন সমাধান করো।

ফেইজ ০৪: দ্য ফাইনাল রিভিশন ও ব্লিৎজ (মাস ১৬ – ১৮)

পরীক্ষার ঠিক আগের এই ৩ মাস কেবল রিভিশন এবং মডেল টেস্টের সময়। নতুন কোনো কঠিন টপিক যা আগে কখনও পড়োনি, তা এই সময়ে ধরার একদমই প্রয়োজন নেই। যা পড়েছো তা বারবার ঝালাই করো। নিজের ভুলগুলো একটি আলাদা ডায়েরিতে লিখে রাখো।

৩. স্মার্ট নোট-টেকিং এবং লার্নিং হ্যাকস

শুধু বই পড়লে হবে না, তথ্যগুলো মস্তিস্কে স্থায়ী করার জন্য তোমাকে স্মার্টলি নোট নিতে হবে। এইচএসসির বিশাল তথ্য মনে রাখার জন্য কিছু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো:

কর্নেল নোট-টেকিং মেথড (Cornell Method)

খাতাকে তিন ভাগে ভাগ করো। বাম পাশে ‘কিউ’ বা প্রশ্নগুলো লেখো, ডান পাশে মূল ‘নোট’ বা ব্যাখ্যা লেখো এবং নিচে ওই পৃষ্ঠার ‘সামারি’ বা সারসংক্ষেপ লেখো। পরীক্ষার আগে যখন তুমি কেবল সামারিগুলো দেখবে, তোমার পুরো অধ্যায় মনে পড়ে যাবে।

অ্যাক্টিভ রিকল (Active Recall)

একটি টপিক পড়ার পর বই বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করো কী পড়লে। যা যা মনে পড়ছে তা একটি সাদা কাগজে দ্রুত লিখে ফেলো। এরপর বই খুলে মিলিয়ে দেখো কোন পয়েন্টগুলো তুমি মিস করেছ। এই পদ্ধতিতে মস্তিস্ক তথ্য সংরক্ষণে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে।

স্পেসড রিপিটিশন (Spaced Repetition)

আজ যা পড়লে, তা ১ দিন পর, ৩ দিন পর, ৭ দিন পর এবং ১ মাস পর রিভিশন দাও। এই স্পেসিং তোমার শর্ট-টার্ম মেমোরিকে লং-টার্ম মেমোরিতে রূপান্তর করবে। তুমি দেখবে তুমি আর কোনোদিন পড়া ভুলছো না।

৪. বিজ্ঞান বিভাগের জন্য আল্টিমেট গাইডলাইন

বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ নিশ্চিত করা মানে হলো কনসেপ্টের ওপর মাস্টারি অর্জন করা। মুখস্থ করে এখানে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হলেও অ্যাডমিশন টেস্টে তুমি বিশাল হোঁচট খাবে।

পদার্থবিজ্ঞান: গাণিতিক সমস্যার নিপুণ সমাধান

ফিজিক্সে ভালো করার একমাত্র গোপন মন্ত্র হলো গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা। বিশেষ করে নিউটনীয় বলবিদ্যা, তড়িৎ এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান অংশ থেকে সৃজনশীল প্রশ্ন প্রায় প্রতি বছরই আসে। সূত্রের প্রতিপাদন একবার নিজে হাতে করলে অংক করার সময় তুমি বুঝতে পারবে কোন প্যারামিটারটি কোথায় বসাতে হবে।

রসায়ন: জৈব রসায়ন ও বিক্রিয়ার ভয় জয়

রসায়ন দ্বিতীয় পত্রের ‘জৈব রসায়ন’ জয় করার একমাত্র উপায় হলো—প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অন্তত ৫টি করে বিক্রিয়া খাতায় লেখা। রসায়নে গাণিতিক সমস্যাগুলো তুলনামূলক সহজ হয়, কিন্তু সমীকরণ ব্যালেন্স করতে ভুল করার কারণে অনেক সময় নম্বর কাটা যায়। পর্যায় সারণি ও গুণগত রসায়ন থেকে সরাসরি থিওরিটিক্যাল প্রশ্ন আসে, যা নম্বর তোলার সহজ মাধ্যম।

উচ্চতর গণিত: ক্যালকুলাস ও ত্রিকোণমিতির গুরুত্ব

ক্যালকুলুস এবং ত্রিকোণমিতি যদি তুমি আয়ত্ত করতে পারো, তবে তুমি ফিজিক্সেও কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকবে। কোনো অংক না দেখে অন্তত ৩ বার করার অভ্যাস করো। পরীক্ষার হলে দ্রুত অংক মেলাতে ক্যালকুলেটরের শর্টকাট টেকনিকগুলো শেখা তোমার জন্য গেম-চেঞ্জার হতে পারে।

জীববিজ্ঞান: চিত্র যখন নম্বর বাড়ানোর অস্ত্র

জীববিজ্ঞানে প্রতিটি বড় উত্তর বা ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের সাথে একটি পরিষ্কার এবং সঠিক লেবেলিং করা চিত্র থাকা বাধ্যতামূলক। উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞানের বিভিন্ন জটিল শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো ফ্লো-চার্টের মাধ্যমে মনে রাখার চেষ্টা করো।

টেস্ট পেপার সলভ করার প্রো-কৌশল

টেস্ট পেপার সলভ করতে গিয়ে বুঝতে পারছো না কীভাবে শুরু করবে? জটিল সব প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা পাচ্ছো না? ১০ মিনিট স্কুলের ‘HSC টেস্ট পেপার সলভ কোর্স’-এ রয়েছে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের ভিডিও সমাধান এবং শর্টকাট ট্রিকস। তোমার প্রস্তুতির পূর্ণতা পেতে এটিই তোমার সেরা হাতিয়ার।

টেস্ট পেপার সলভ কোর্সে জয়েন করো

৫. ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ: উপস্থাপনা ও তথ্যের শক্তি

এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ৩ ঘণ্টার মধ্যে পুরো খাতা শেষ করা এবং উত্তরপত্রের প্রেজেন্টেশন আকর্ষণীয় করা। তথ্যবহুল খাতা সবসময় পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

হিসাববিজ্ঞান: সূক্ষ্মতা ও ক্যালকুলেটরের গতি

হিসাববিজ্ঞানের মেরুদণ্ড হলো জাবেদা ও আর্থিক বিবরণী। রেওয়ামিল এবং কার্যপত্র করার সময় যোগ-বিয়োগে সামান্য ভুলেই পুরো অংক ভুল হয়ে যেতে পারে। প্রতিটি এন্ট্রি কেন ডেবিট হলো বা কেন ক্রেডিট হলো, তার পেছনের লজিক বোঝার চেষ্টা করো। অংক শেষ করার পর ছকগুলো স্কেল দিয়ে নিখুঁতভাবে টানা জরুরি।

অর্থনীতি ও পৌরনীতি: গ্রাফ এবং মনিষীদের উক্তি

অর্থনীতিতে গ্রাফ বা রেখাচিত্রগুলো পেন্সিল দিয়ে নিখুঁতভাবে আঁকো। ব্যাখ্যার চেয়ে গ্রাফের নির্ভুলতা বেশি নম্বর এনে দেয়। পৌরনীতি ও ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ উক্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক পদের মেয়াদকাল ও সালগুলো আলাদা করে নোট করো। উত্তর লেখার সময় বিভিন্ন মনিষীর কোটেশন ব্যবহার করলে নম্বর বেড়ে যায়।

৬. জিপিএ-৫ এর ‘সাইলেন্ট কিলার’ সাবজেক্ট: ইংরেজি, বাংলা ও আইসিটি

অধিকাংশ সায়েন্স বা কমার্সের শিক্ষার্থী তাদের মূল বিষয়গুলোতে অনেক ভালো করলেও ইংরেজি বা বাংলায় এ-প্লাস মিস করার কারণে গোল্ডেন জিপিএ হারিয়ে ফেলে।

ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্র

ইংরেজি গ্রামারে ৬০-এ অন্তত ৫৫ টার্গেট করতে হবে। রাইটিং পার্টে (Paragraph, Composition, Email) কমন পড়ার আশায় না থেকে নিজের ভাষায় বানিয়ে লেখার দক্ষতা অর্জন করো। কানেক্টর এবং মডিফায়ারের রুলসগুলো নিয়মিত হাতে-কলমে প্র্যাকটিস করো।

বাংলা ১ম ও ২য় পত্র

বাংলায় এ-প্লাস পাওয়া মানে হলো তোমার গোল্ডেন জিপিএ-র পথ পরিষ্কার হওয়া। ১ম পত্রে প্রতিটি কবিতা ও গল্পের মূলভাব খুব ভালো করে পড়ো। ২য় পত্রে ব্যাকরণ অংশে নম্বর তোলা অংকের মতো সহজ, তাই এখানে সময় বেশি দাও। বানানের দিকে বিশেষ নজর দাও।

আইসিটি (ICT)

৩য় অধ্যায়ের সংখ্যা পদ্ধতি ও লজিক গেট এবং ৫ম অধ্যায়ের প্রোগ্রামিং না বুঝলে পরীক্ষায় ফুল নম্বর পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সি-প্রোগ্রামিং এর কোডগুলো মুখস্থ না করে লজিক বুঝে নিজে খাতায় লেখার প্র্যাকটিস করো।

৭. সুস্বাস্থ্য ও মানসিক প্রশান্তি: লং-টার্ম প্রস্তুতির মূল ভিত্তি

পড়াশোনার চাপে অনেক শিক্ষার্থী তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে ফেলে, যার প্রভাব পড়ে সরাসরি পরীক্ষার রেজাল্টে। সুস্থ শরীর ছাড়া সুস্থ মস্তিস্ক অসম্ভব।

  • পর্যাপ্ত ঘুম: দিনে অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা নিচ্ছিদ্র ঘুম প্রয়োজন। ঘুমের অভাবে তোমার মস্তিস্ক তথ্যগুলো দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে জমা করতে পারে না।
  • পুষ্টিকর খাবার: অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে প্রচুর পানি এবং সতেজ খাবার খাও। এটি তোমার মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করবে।
  • স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হলে গভীর শ্বাস নাও অথবা ১০ মিনিট প্রিয় কোনো কাজ করো। মনে রাখবে, আতঙ্কিত হলে জানা জিনিসও ভুল হয়ে যায়।

৮. পরীক্ষার হলের ৩ ঘণ্টার রণকৌশল

পরীক্ষার হল কেবল মেধার লড়াই নয়, এটি সময়ের এবং স্নায়ুর লড়াই। তোমাকে প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের প্রতিটি সেকেন্ডের হিসাব রাখতে হবে।

সৃজনশীল প্রশ্নের অংশ সময় বরাদ্দ কৌশল ও প্রেজেন্টেশন
জ্ঞানমূলক (ক) ১-২ মিনিট সরাসরি টু-দ্য-পয়েন্ট উত্তর।
অনুধাবনমূলক (খ) ৩-৪ মিনিট দুটি প্যারা; ১ম প্যারায় মূল কথা, ২য় প্যারায় ব্যাখ্যা।
প্রয়োগমূলক (গ) ১০-১২ মিনিট উদ্দীপকের ঘটনার সাথে বইয়ের থিওরির সংযোগ।
উচ্চতর দক্ষতা (ঘ) ১৫-১৭ মিনিট যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও নিজস্ব মতামত।

খাতা সাজানোর প্রো-টিপ

পয়েন্টগুলো নীল কালি দিয়ে হাইলাইট করো। কাটাকাটি একদম করবে না। যদি কোনো উত্তর ভুল হয়, তবে জাস্ট এক দাগে কেটে দাও। খাতা যত পরিষ্কার হবে, পরীক্ষক তত সহজে নম্বর দিতে পারবেন।

৯. ডিজিটাল ডিটক্স এবং অ্যাডমিশন প্রস্তুতি

স্মার্টফোন বর্তমান যুগের শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ হতে পারতো, কিন্তু অধিকাংশের জন্য এটি অভিশাপ। সোশ্যাল মিডিয়া কেবল পড়াশোনার পর একটি ‘রিওয়ার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করো।

এইচএসসি ও অ্যাডমিশন: একইসাথে প্রস্তুতির রেসিপি

মনে রাখবে, অ্যাডমিশন টেস্টে আকাশ থেকে কোনো প্রশ্ন আসে না। তোমার এইচএসসির পাঠ্যবইয়ের বেসিক থেকেই সব প্রশ্ন আসে। তুমি যখন বোর্ড পরীক্ষার জন্য একটি অধ্যায় পড়ছো, তখনই সেই অধ্যায় থেকে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী প্রশ্ন এসেছে তা দেখে নাও। এতে তোমার প্রস্তুতিতে কোনো ‘গ্যাপ’ থাকবে না।

স্বপ্ন যখন বুয়েট, মেডিকেল বা ঢাবি

বোর্ড পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যাডমিশন প্রস্তুতিতে নিজেকে একধাপ এগিয়ে রাখতে আজই শুরু করো তোমার যাত্রা। ১০ মিনিট স্কুলের কমপ্লিট সলিউশন তোমার স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে। জয়ী তারাই হয় যারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।

সকল অ্যাডমিশন কোর্স দেখে নাও

১০. চূড়ান্ত কথা: বিজয় তোমার হবেই!

এইচএসসি রেজাল্ট ভালো করা কোনো অলৌকিক বিষয় নয়। এটি কেবল সঠিক পরিকল্পনা, অসীম ধৈর্য এবং কঠোর পরিশ্রমের এক সম্মিলিত ফল। আজকের এই দুই বছরের কষ্ট তোমার আগামী ৪০ বছরের জীবনকে রাজকীয় করে তুলতে পারে। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে এবং নিজের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার এই সুযোগটি হাতছাড়া করো না। আজ থেকেই তোমার নতুন রুটিন তৈরি করো, পড়া জমিয়ে না রেখে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করো। বিজয় তোমারই হবে!

অন্বেষণ
অন্বেষণ
অন্বেষণ হলো বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল নলেজ-বেজড রিভিউ প্ল্যাটফর্ম। আমাদের মিশন হলো তথ্যের ভিড় থেকে খাঁটি জিনিসটি খুঁজে বের করে তোমার সামনে তুলে ধরা। আমরা বিশ্বাস করি, একটি সঠিক বই বা একটি সঠিক কোর্স তোমার পুরো জীবন বদলে দিতে পারে। আমরা কোনো গতানুগতিক নিউজ পোর্টাল নই। আমরা তোমার বড় ভাইয়ের মতো, যে তোমাকে হাতে ধরে দেখিয়ে দেবে—কোনটা কেনা উচিত আর কোনটা এড়িয়ে চলা উচিত। আমাদের প্রতিটি রিভিউ বাস্তব অভিজ্ঞতা, গভীর গবেষণা এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here